Skip to content

Latest commit

 

History

History
56 lines (31 loc) · 11.8 KB

দৈত্যর-সাইক্লোন-আদনান-মুকিত.md

File metadata and controls

56 lines (31 loc) · 11.8 KB


দৈত্যর সাইক্লোন

আদনান মুকিত



‘৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব মাত্র ১০০ টাকায়।’ প্যাকেট থেকে বাল্বটা বের করে বললাম আমি। ‘দামে কম, মানে ভালো। ঝকঝকে আলো…মাইকে এটাই বলছিল।’

আমার কথার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না ইমা। এটাই স্বাভাবিক। আমি যা-ই কিনি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ওর স্বভাব। ইমার প্রশ্ন শোনার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম।

‘মাইকে বলল, আর তুমি বিশ্বাস করে কিনে আনলা?’ ফোন থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ইমা।

‘পাইকারি দামে দিচ্ছে।’ বাল্বটা নিয়ে ওর পাশে বসলাম আমি। ‘তার ওপর এনার্জি সেভিং। বর্তমান পৃথিবীতে যেভাবে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, আমাদের তো দায়িত্ব এনার্জি সেভ করা, কী বলো?’ আমার কথা কিংবা হাতের বাল্ব—কোনোটাই সন্তুষ্ট করতে পারল না ইমাকে। প্রায় ফিউজ হয়ে যাওয়া বাল্বের মতো অনুজ্জ্বল মনে হলো ওর মুখ। ফোনটা রেখে ঝাঁজালো কণ্ঠে বলল, ‘সব সময় খালি সস্তা, ডিসকাউন্ট খোঁজো কেন তুমি? আমি মরে গেলে কাফনের কাপড়েও তো মনে হয় ডিসকাউন্ট খুঁজবা।’

‘ধুর, কী যে বলো! ডিসকাউন্ট খুঁজব কেন? ওটা ফ্রি-ই পাব। আমার এক বন্ধুর এই ব্যবসা আছে। শেষবিদায় স্টোর। বললেই ভালো কাপড় দিয়ে যাবে।’

‘তুমি একটা মিউজিয়াম দাও। ডিসকাউন্টে কেনা নষ্ট বাল্ব, ওভেন, ইস্তিরি—এসব সাজিয়ে রাখবে। টিকিট কেটে লোকজন দেখতে আসবে।’

‘খারাপ বলো নাই, সেই মিউজিয়ামে স্টুডেন্টদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্ট থাকবে। আচ্ছা, মোড়াটা কোথায়? বাল্বটা জ্বালিয়ে দেখাই।’

মোড়াটা এনে দিয়েই হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ইমা। বাল্বটা ফিট করে না দেখালে আর হচ্ছে না। মোড়ার ওপর উঠলাম আমি। বাল্বটায় কি দাগ নাকি? আশ্চর্য, কেনার সময় তো দাগটা খেয়াল করিনি। গেঞ্জি দিয়ে দাগটায় হালকা ঘষা দিতেই পট করে ভেঙে গেল বাল্বটার কাচ। আয়হায়! এটা কী হলো? বাল্ব থেকে কেমন ধোঁয়া বের হচ্ছে। এটা আসলেই বাল্ব তো? নাকি বোমা? রাসায়নিক অস্ত্রও হতে পারে। হাত থেকে মাটিতে ফেলে দিলাম বাল্বটা। সঙ্গে সঙ্গে কাচ ভেঙে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া সাইক্লোনের মতো উঠে গেল ঘরের সিলিং পর্যন্ত। মুহূর্তেই অনেকটা মানুষের মতো অবয়ব ধারণ করল সেটা। একটু পর হাওয়ায় ভেসে উঠল একটা দৈত্য!

আরে! আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতো বাল্ব থেকে দৈত্য বের হলো নাকি! ঢোঁক গিললাম আমি। স্যুট-টাই পরা টাকমাথার ক্লিনশেভড দৈত্য বলল, ‘ওয়েলকাম টু মাই প্রেজেন্টেশন। আমি এই বাল্বের দৈত্য! আপনার ইচ্ছাপূরণে সদা প্রস্তুত।’

আরে সত্যিই তো! আমার তো কপালের লক খুলে গেছে দেখছি! খুশিতে লাফিয়ে বললাম, ‘আমার প্রথম ইচ্ছা, ঢাকায় পাঁচতলা বাড়ি!’

‘ওয়েট।’ হাত দেখিয়ে আমাকে থামাল দৈত্য। ‘আলাদিনের সেই যুগ আর নাই যে চাইলেই সব পাবেন।’ দৈত্য ইশারা দিতেই ভেসে উঠল একটা স্ক্রিন। পাওয়ার পয়েন্ট টাইপের একটা প্রেজেন্টেশন সেই স্ক্রিনে। বেশ কয়েকটা ধাপের বর্ণনা আছে সেখানে। দৈত্য তা দেখিয়ে বলল, ‘প্রথমেই আপনাকে আমাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে সাইন আপ করতে হবে। তারপর অ্যাকাউন্ট খুলে অ্যাপে থাকা অপশনগুলো থেকে বেছে নিতে হবে আপনার তিনটি ইচ্ছা।’

‘কেন?’ বিরক্ত হলাম আমি। ‘এ রকম নিয়ম তো আগে শুনি নাই।’

দৈত্য আমার ওপর ঝুঁকে বলল, ‘আগে কোনো দিন এনার্জি বাল্ব থেকে দৈত্য বের হতে দেখেছেন?’

‘না।’

‘তাহলে এত কথা বলেন কেন? ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করেন। নাইলে গেলাম। বাল্বের ধোঁয়া শেষ হয়ে যাওয়ার আগে যদি অর্ডার না করেন, তাহলে অফার ক্যানসেল।’

দৈত্যর অ্যাপ অটো চলে এল আমার ফোনে। ইনস্টল করে সাইন আপ করলাম। ওমা, এখানে তো প্রায় সব রকম পণ্য! একেবারে ডায়াপার থেকে শুরু করে গাড়ি—সবই আছে। কিন্তু একি, কোনোটাই তো দেখি ফ্রি না!

‘এসব কী?’ মেজাজ খারাপ হলো আমার। ‘কিনতে হবে নাকি?’

‘অফকোর্স।’ কোমরে হাত রেখে বলল দৈত্য। ‘আমাদের সিনিয়র দৈত্যরা ফ্রি ফ্রি ইচ্ছা পূরণ করে আপনাদের অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছে। মানুষের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে তারা সবাই আজ দেউলিয়া। কোনো সার্ভিস চার্জও নেয়নি। চিন্তা করা যায়? আরে ভাই, দৈত্য হলেও আমাদের তো সংসার, বউ–পোলাপান আছে। চলতে হবে না? এ জন্য আমাদের এই স্টার্টআপ। আপনি অর্ধেকের কম দামে জিনিস পাবেন, আমরাও খেয়ে–পরে বাঁচতে পারব।’

মায়াই লাগল দৈত্যটার কথা শুনে। আসলেই তো, এত ইচ্ছা পূরণ করে ওদের লাভটা কী? আমি একটা মোটরসাইকেল, একটা টিভি অর্ডার দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে কনফারমেশন মেসেজ চলে এল। দৈত্য ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘তাহলে আমি আসি। যেকোনো সমস্যা আমাদের অ্যাপে জানাবেন।’

‘আসি মানে? আমার টিভি? মোটরসাইকেল?’

‘আরে মাত্র তো অর্ডার করলেন। গল্প–উপন্যাসের দৈত্যর মতো এগুলো তো আকাশ থেকে আসবে না। সময় লাগবে। তিন মাসের মধ্যে আপনার প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন।’

যেভাবে হুট করে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই হাওয়া হয়ে গেল দৈত্যটা। আমি আর আনন্দ চেপে রাখতে পারলাম না। ছুটে গিয়ে ইমাকে জানালাম। শুনে ইমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। পড়বেই তো, এত সস্তায় মোটরসাইকেল, টিভি পেয়ে গেলাম, মাথায় হাত না দিয়ে উপায় আছে?

কদিন পর যখন আবিষ্কার করলাম দৈত্যর অ্যাপটা কাজ করছে না, তখন আমিও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। দ্রুত ছুটে গেলাম ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে। সেখানকার এক কর্মকর্তা কান চুলকে বললেন, ‘আপনিও দৈত্যর কাছে প্রোডাক্ট অর্ডার দিছিলেন? হায় রে পাবলিক। অবশ্য আপনাদেরই–বা কী দোষ, আজকাল দৈত্যগুলাও বাটপার হইয়া গেছে!’

তারপর আর কী! অনেক এনার্জি বাল্ব ভাঙলাম, কোনোটা থেকেই দৈত্য বের হলো না। ৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব ১০০ টাকায়—এই বিজ্ঞাপন শুনলেই এখন আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আপনি যদি কোনো দৈত্যর দেখা পান, জাস্ট আমাকে জানাবেন, খেলা হবে।